হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা


EDITOR প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৪, ২০২৪, ২:৫৯ অপরাহ্ন /
হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলা

আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় সব গ্রামীণ খেলাধুলা। এসব খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে- কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুটি, ঘোড়দৌড়, ফুটবল, নৌকাবাইচ, গোল্লাছুট, চারগুটি, লাঠি খেলা, লং জাম্প, সাত পাতা, ফুল টোক্কা, মোরগযুদ্ধ, হাডুডু ইত্যাদি। গ্রামে আগের মতো চোখে পড়ে না ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতাও।

গ্রামের প্রবীণরা বলেন, আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় ও প্রযুক্তির বিকাশে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় গ্রামীণ সব খেলাধুলা। সময়ের বিবর্তনে মাঠ, বিল, ঝিল ভরাট হয়ে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধুলা। একটা সময় ছিল গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শিশু ও কিশোররা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় অভ্যস্ত ছিল। অবসরে দল বেঁধে খেলতো নানা প্রকারের খেলা। বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার আনাচে-কানাচে, খোলা মাঠে কম পরিসরেই খেলা যেত। এখন ছেলে-মেয়েরা সবাই মোবাইলে আসক্ত।

জানা যায়, বর্তমান সময়ে শহরের শিশুরা ঘরের এক কোণে বসে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ভিডিও গেম, কার্টুন নিয়ে সময় পার করে থাকে। এর ফলে তাদের মেধার বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক সময় গ্রামবাংলার ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা ও বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের নানা কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বিভিন্ন ধরনের খেলা করে সময় কাটাতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুটি, ঘোড়দৌড়, ফুটবল, নৌকাবাইচ, কানামাছি, গোল্লাছুট, চারগুটি, লাঠি খেলা, দীর্ঘ লাফ, সাত পাতা, ফুল টোক্কা, মোরগযুদ্ধ, হাডুডু ইত্যাদি খেলা ছিল বিনোদনমূলক, স্বাস্থ্য সচেতনমূলক ও প্রতিভা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রযুক্তির দাপটে গ্রামীণ এসব খেলাধুলা দিন দিন বিলুপ্ত হতে হতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে আমাদের দেশের গ্রামীণ বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিনোদনমূলক এসব খেলা।

সচেতন মহলের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দিন দিন খেলার মাঠের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ বেকারত্বের ফলে প্রতিনিয়ত শহরমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে। শহরে খেলার মাঠ গ্রামের তুলনায় অনেকংশেই কম। শিশুদের মোবাইল ব্যবহারে প্রবণতা বাড়ছে। স্কুল-কলেজে বছরে কয়েকদিনের জন্য ক্রীড়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। পরে আর কোনো খেলার আয়োজন চোখে পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমাতে হলে গ্রামীণ এ সব খেলাধুলার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। শিক্ষক থেকে শুরু করে পরিবার, সবারই উচিৎ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী এসব খেলাধুলার প্রতি তাদের উৎসাহিত করা।

তারা আরও বলেন, শিশুদের অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির ফলে তারা একটা সময় একরোখা স্বভাবের হয়ে ওঠে। মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলে তারা আরও বেশি খারাপ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং, শিশু অপরাধ সবই এই মোবাইল আসক্তির ফল। যদি তাদের মোবাইল আসক্তি দুর করতে হয়, তাহলে গ্রামীণ এসব খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। তাহলে যেমন আমাদের এসব খেলাধুলা বিলুপ্ত হবে না, তেমনি আমাদের শিশুদেরও মেধার বিকাশ ঘটবে।