৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে ক্যালিগ্রাফি ও গ্রাফিতি করা শুরু হয়। এরমধ্যে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ নামে একটি গ্রাফিতি প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই গ্রাফিতি ব্যবহার হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনসহ নানানভাবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করা এই গ্রাফিতিটির কারিগর ছিলেন দুই মাদরাসাছাত্র। শুধু স্বাধীনতা সূর্যোদয় নয়, একের পর এক গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি করে দেশজুড়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন উসাইদ মুহাম্মদ ও মোহাম্মদ ওমর নামের দুই মাদরাসাছাত্র।
উসাইদ মুহাম্মদ ও মোহাম্মদ ওমর দুজন একযুগের বন্ধু। একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর একটি মাদরাসায়। পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসেন মোহাম্মদ ওমর। উসাইদের বাড়ি ফরিদপুরে। তিনি বর্তমানে ঢাকায় মোহাম্মদপুরে একটি মাদরাসায় ইফতা বিভাগে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি এশিয়ান ইউনির্ভাসিটিতে অনার্সে পড়ছেন।
মোহাম্মদ ওমরের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বড়াইলে। তিনি পড়ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাস দাওরা হাদিসে।
৫ আগস্টের পর একের পর এক দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি করে আলোচনায় আসেন তারা। তারা প্রথমে জেলা শহরের ডাক বাংলো এলাকায় ভাঙা একটি দেয়ালে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ নামে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করেন। এর পাশেই ‘নো জাস্টিস, নো পিস’ নামে অঙ্কন করেন আরেকটি গ্রাফিতি। এরমধ্যে আলোচনায় আসে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ নামের গ্রাফিতিটি।
ভাইরাল হয়ে যায় ফেসবুকে। দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে টিস্যু বক্সেও ব্যবহার করা হয় এই ছবি।
এরপর পৌর মার্কেটের দেয়ালে বিশাল আকারের একটি ক্যালিগ্রাফি, শহরের পাওয়ার হাউজ রোডের দেয়ালে নানা নামে গ্রাফিতি ও ক্যালিগ্রাফি করেন উসাইদ মুহাম্মদ ও মোহাম্মদ ওমর। কয়েকদিন আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাওয়ার হাউজের দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত একটি ভবনে ‘তুফান’ নামের আরেকটি গ্রাফিতি করে আবারও হইচই ফেলে দিয়েছেন। এতে মসজিদুল আল আকসা ও ফিলিস্তিনের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরেছেন এই দুই মাদরাসাছাত্র। তাদের এই চিত্রকর্ম করার পেছনে সহযোগিতা করছেন ‘ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামের একটি সংগঠন।
এ বিষয়ে ক্লিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কো-ফাউন্ডার শামীম সাইম বলেন, ‘তারা গ্রাফিতি করতে কোনো জায়গা নির্ধারণ করলে সেই স্থান আমরা পরিষ্কারের কাজ করে থাকি। তাদের কাজগুলো মনোমুগ্ধকর।’
জিনাত বেগম নামের এক নারী বলেন, “তাদের গ্রাফিতি দেখে ভালো লাগে। তাই তাদের কিছুর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি। ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের’ পর সম্প্রতি শহরের পাওয়ার হাউজে করা ‘তুফান’ গ্রাফিতিটি আরও সুন্দর হয়েছে।”
এ বিষয়ে উসাইদ মুহাম্মদ বলেন, নতুন বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতা নিয়ে আমরা প্রথম কাজটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করি। তা প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু গ্রাফিতি করেছি যাতে ফিলিস্তিনের সংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে একত্রে বোঝানো হয়েছে। এসব কাজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করছে, যা আমাদের জন্য খুবই ভালো লাগার বিষয়।
অপর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওমর বলেন, নব্য স্বাধীনতা আমাদের একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই স্বাধীনতা অর্জনের পর আমাদের হৃদয়ে থাকা আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
আপনার মতামত লিখুন :