বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম মেজর (অব.) শমসের মবিন চৌধুরী। বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে। ছিলেন শক্তিধর রাজনীতিবীদ। কিন্তু আম-ছালা সব হারিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেউলিয়া হওয়া এখন এক নাম শমসের মবিন।
বর্তমানে তিনি ‘তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন। তবে গত আওয়ামী লীগ সরকারের ‘মদদপুষ্ট’ হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আটক হয়ে হয়ে যেতে হয়েছে জেলহাজতে। বিকাল রাজধানীর বনানীস্থ বাসা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। তাই যেন সিলেটের এ রাজনীতিবীদের এখন আম-ছালা দুটোই গেলো।
শমসের মবিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপির আমলে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। সামরিক কর্মকর্তা থেকে আমলা ও পরে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠা শমসের মবিন ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান তখন ছিলো প্রায় আকাশচুম্বী। দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীর চোখে ছিলেন সমীহের নেতা। কিন্তু নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা ও সদর উপজেলা) আসনে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা ছিল শমসের মবিন চৌধুরীর। শেষ পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে এখানে বিএনপির প্রার্থী করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে দেখা দেয় মতবিরোধ। হতাশ হয়ে পড়েন শমসের মবিন চৌধুরী ও তাঁর অনুসারীরা।
এ অবস্থায় ২০১৫ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মবিন দল থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২০১৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে যান তৃণমূল বিএনপিতে। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৃণমূল বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সে কাউন্সিলে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পান শমসের মবিন চৌধুরী। তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম নাজমুল হুদা। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এরপর আওয়ামী লীগের ‘মদদপুষ্ট’ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় বিতর্কিত (দ্বাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। এমপি প্রার্থী হন নিজ বাড়ির আসন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) থেকে। কিন্তু কপাল খুলেনি তাঁর, ভোটের মাঠে ধরাশায়ী হন বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেতা। এমনকি হারিয়ে বসেন জামানতও।
এ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে সোনালী আঁশ প্রতীকে ১০ হাজার ৮৫৮ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করেন শমসের মবিন। আসনটিত নির্বাচিত হন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী- কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন (ঈগল প্রতীকে) পান ৩৯ হাজার ৪৮৮ ভোট।
সিলেটের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- বিএনপি ছাড়া থেকে নিয়ে পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি বড় ভুল করে ফেলেছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। যে কারণে জন্মভূমি সিলেট ও ঢাকায় হয়ে যান রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া।
আপনার মতামত লিখুন :