আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৯) সাইডলাইনে মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে বিশ্ব নেতারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসার পাশাপাশি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
সাক্ষাৎ হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, ঘানার রাষ্ট্রপতি নানা আকুফো-আড্ডো, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুইজ্জু, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাষ্ট্রপতি ডেনিস বেচিরোভিচ, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মটলি, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইদি রামা, লিচেনস্টাইনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল রিশ, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট শিনা আনসারি।
এছাড়াও মিসরের মর্যাদাবান আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমেদ আল তাইয়েব এবং ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর সঙ্গে সাক্ষাৎকার করেন তিনি। এ সময় নেতারা জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বাসসকে বলেন, ‘জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও আরব-আমিরাতে প্রেসিডেন্টসহ ২০ জন বিশ্বনেতা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানান।’
অপূর্ব জাহাঙ্গীর আরও বলেন, সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান অধ্যাপক ইউনূসকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। অধ্যাপক ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিককে মুক্তি দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা আরব-আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানান।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আল আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমেদ আল তাইয়েব বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে এবং উন্নতি করবে। এ সময় অধ্যাপক ইউনূসকে হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান ড. আহমেদ আল তাইয়েব। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফান্ডেন্ড স্কলারশিপ ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি।
গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী। আপনি একজন বিচক্ষণ মানুষ। বিপ্লবের পর বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। আমি আপনাকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করার জন্য স্যালুট জানাই।’ অধ্যাপক ইউনূস গ্র্যান্ড ইমামকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সশরীরে ঘুরে দেখার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় যুব উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। অধ্যাপক ইউনূস ফিফা প্রধানকে উৎসব সম্পর্কে অবহিত করেন এবং স্বনামধন্য মহিলা ফুটবল দলকে বাংলাদেশে আনতে তার সহায়তা কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বর্তমানে ৪ দিনের সরকারি সফরে বাকুতে অবস্থান করছেন। সোমবার আজারবাইজানের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বাকু পৌঁছেন। তিনি কপ-২৯ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন এবং সাইডলাইনে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। সম্মেলন চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট সমাধানের লক্ষ্যে এবারের সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মিলিত হয়েছেন। সম্মেলনের মূল লক্ষ্য জলবায়ু সংকটের ভুক্তভোগী দরিদ্র দেশগুলোকে আরও অর্থ সহায়তার পথ খুঁজে বের করা।
আপনার মতামত লিখুন :