৫ আগস্টের আগে হাসিনাবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন সিলেটে বেশি তীব্র হয় জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। একদিন আগে অর্থাৎ- ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জ পৌরসদর ও ঢাকাদক্ষিণ এলাকা হয়ে উঠে পুরো রণক্ষেত্র। উপজেলার প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। সেদিন পুলিশ, বিজিবি ও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা ও গুলিতে একে একে মারা যান ৭ জন। এর মধ্যে একজন উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ এলাকার রায়গড় গ্রামের ছুরাই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ (২৪)।
হাসানকে হারিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এখনো বাকরুদ্ধ। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- সুনসান পরিবেশ বিরাজ। চারদিকে শোকের আবহ। এখনো পথপানে চেয়ে চোখের জল ফেলেন হাসানের মা সালমা বেগম।
স্থানীয় বাজারে ছোট একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিলো হাসানের। এলাকার লোকজন এ প্রতিবেদককে জানান- ৪ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ এলাকা উত্তাল হয়ে উঠে। রক্তে বান ডাকে টগবগে যুবক হাসানেরও। দোকান বন্ধ করে তিনিও চলে যান আন্দোলনে। যোগ দেন স্বৈরাচারবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে।
দুপুরের দিকে মিছিলটি ঢাকা দক্ষিণ বাজার অতিক্রম করে ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আসামাত্র গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ-বিজিবি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় হাসান আহমদসহ ২০-৩০ জন গুলিবিদ্ধ হন। হামলার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয়রা আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসান আহমদসহ কয়েকজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাদেরকে সিলেট মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেটের প্রাইভেট একটি হাসপাতালে মারা যান গুলিবিদ্ধ হাসান আহমদ।
তার মৃত্যুর খবরে এলাকা আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। স্থানীয়রা গোলাপগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। একপর্যায়ে হাসানের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মূল অভিযুক্তরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
অপরদিকে, হাসােকে হারানোর শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছে না তার পরিবার ও স্বজনরা।
সালমা বেগমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখা যায়- ঘরের সামনের কক্ষে টানানো ফ্রেমে বাধানো হাসানের ছবিসম্বলিত একটি স্বরণিকা। তাতে লেখা- ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে শহিদ হয়েছেন হাসান আহমদ।
কথা বলতে গেলে অঝোরে কাঁদতে থাকেন সালমা বেগম। ধরা গলায় তিনি বলেন- ‘আমার ছেলেকে হারিয়ে আমরা এখন অসহায়। সে আমাদের পরিবারের দায়িত্বশীল ছিল। আমার ছেলেকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে- জীবদ্দশায় আমি তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেখকে চাই।’
তিনি আফসোস ও অভিযোগ করে বলেন- যারা গুলি করে আমার কলিজার টুকরোর শরীর ঝাঁঝরা করেছে তারা এখনো বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি চরম হতাশার। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব নিয়েছে নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র পাল। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি ছুটে যান নিহতদের বাড়ি। যান হাসান আহমদের বাড়িতেও। হাসানের বাবা-মাসহ পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস প্রদান করেন এবং গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :