পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে নভেম্বর মাস থেকে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় আছে জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলো। দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্পট পর্যটকরা পরিদর্শন করলেও দিনের শুরুতে তারা বেছে নেন জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরের লাল শাপলা বিলকে।
শীতের শুরুতে ভোরের মিষ্টি রোদে পুরো বিল যখন লাল শাপলায় ছেয়ে যায়, তখন পর্যটকদের যাত্রার শুরুটা হয় লাল শাপলা বিল পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে। বর্তমানে যত দিন যাচ্ছে ভোর হওয়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়ছে বিল এলাকায়।
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত স্থানটি পর্যটকদের কাছে ইতোমধ্যে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সীমান্তবর্তী মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল, কেন্দ্রী বিলসহ ৯০০ একর জায়গায় এই লাল শাপলার রাজ্য। প্রতি বছর শরতের শেষ দিকে শাপলা ফুটতে দেখা যায়। গত কয়েক দিন থেকে এখানে নতুন ফুল ফোটায় বাড়ছে পর্যটক। তাদের জন্য স্থানীয়ভাবে সুরক্ষা কমিটি করা হয়েছে। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে হাওর ঘুরে কাছ থেকে লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থা।
পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় শাপলা বিল সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা পর্যটকদের বরণ করছি এবং তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ডিবির হাওরে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা লোকজনও বেশ উচ্ছ্বসিত। পানির ওপর ভেসে থাকা লাল শাপলার গালিচা তাদের মন জয় করে নিয়েছে।
ঢাকার রামপুরা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রুহুল আমিন বলেন, প্রতি বছর শীতে আমি এখানে ঘুরতে আসি। এখানে এলে আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। প্রকৃতি যে কত সুন্দর তা এখানে না এলে কোনোভাবে বোঝানো যাবে না। তাই পরিবার-পরিজনসহ বেড়াতে এসেছি।
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, ডিবির হাওরে সব সময় আমাদের টহল টিম থাকে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় আমরা সদা তৎপর রয়েছি। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি বিল সুরক্ষা কমিটি পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে।
যেভাবে যাবেন ডিবির হাওরের লাল শাপলা বিলে :
সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট থেকে জাফলংগামী বাসে করে যাওয়া যাবে জৈন্তাপুর বাজারে। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত টমটম বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে সরাসরি বিলে যাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা আর টমটম বা সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া জৈন্তাপুর বাজার থেকে ৩০ টাকা করে।
এছাড়া সিলেট নগরী থেকে সরাসরি বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা লেগুনা রিজার্ভ করেও যাওয়া যাবে ডিবির হাওরে। আর হাওরে নৌকা নিয়ে ঘুরতে হলে এক ঘণ্টার জন্য খরচ করতে হবে ৪৫০ টাকা।
আপনার মতামত লিখুন :